ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ০৮ জুলাই ২০২৫, ১২ মহররম ১৪৪৭

নির্বাচন ও ইসি

পদত্যাগ পছন্দ নয়, শতভাগ ভোট পড়ায় অস্বস্তিতে ছিলাম

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:২৯, জুন ৪, ২০২২
পদত্যাগ পছন্দ নয়, শতভাগ ভোট পড়ায় অস্বস্তিতে ছিলাম কে এম নূরুল হুদা

ঢাকা: দায়িত্বে থাকার সময় কোথাও কোথাও নির্বাচনে শতভাগ ভোট পড়ায় অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন সম্প্রতি বিদায় নেওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেন, পদত্যাগ আমার পছন্দ নয়।

এটি কাপুরুষোচিত বিষয়।  

শনিবার (৪ জুন) রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন সম্ভব’ শীর্ষক ছায়া সংসদে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নূরুল হুদা এসব মন্তব্য করেন।  

সংসদ নির্বাচনে বিএনপি না এলে গ্রহণযোগ্যতা পাবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, পাবে না। আমি মনে করি এ নির্বাচনে বিএনপিকে নির্বাচনী মাঠে আনতে হবে এবং সেটার দায়িত্ব সরকারি দলের নিতে হবে। বিএনপিকেও আমার অনুরোধ থাকবে, যে এ নির্বাচন বর্জন করে, বয়কট করে সমস্যার সমাধান হবে না। এটাকে আপনারা আলোচনা করে ঠিক করবেন, কীভাবে নির্বাচনে যাবেন।  

নূরুল হুদা বলেন, বিএনপি একটি অত্যন্ত বড় দল। সুতরাং তাকে বাইরে রেখে নির্বাচনে এলে সেটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্বব্যাপী নির্বাচন কমিশন একটি চ্যালেঞ্জিং প্রতিষ্ঠান। রাজনৈতিক সমঝোতায় নির্বাচন কমিশনের কোনো ভূমিকা নেই। নির্বাচন কমিশনের এতে হাত দেওয়া উচিৎ হবে না। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনা করে এ বিষয়ে সমঝোতায় আসবে।  

সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে না পারলে সিইসির পদত্যাগ করা উচিত কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পদত্যাগ করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না। পদত্যাগ কাপুরুষোচিত বিষয়। এটি আমার পছন্দ না।  

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রসঙ্গে সাবেক সিইসি বলেন, কর্মজীবনের শুরু থেকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তখন থেকে দেখেছি, বিভিন্ন সময় ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া হতো। ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের সেই কালচারটা ইভিএমের মাধ্যমে বন্ধ হয়েছে। আরও অন্তত ২০ বছর আমাদের ইভিএমে থাকা উচিত।  

তিনি আরও বলেন, আমরা ইভিএমে প্রাধান্য দিয়েছি কারণ এটার মাধ্যমে কারচুপি করা যায় না। একজনের ভোট আরেকজনে দেওয়া যায় না। নির্ধারিত সময়ের আগে ও নির্ধারিত সময়ের পরে আর নতুন করে ভোট দেওয়া যায় না এবং ভোটগুলো সংরক্ষিত থাকে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কেন্দ্রে ভোট গণনা করা যায় এবং প্রার্থী ও তাদের এজেন্টরা পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মধ্যে রেজাল্ট পেয়ে যায়। সেটি কোনোভাবেই পরিবর্তন করা যায় না। তবে ব্যালট ইউনিটকে যদি টেকনোলজির আওতায় আনা যায় যে, এ জায়গাটুকু নিরাপদ রাখার দায়িত্ব হবে নির্বাচনে যারা দায়িত্বপালন করেন তাদের, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত যারা থাকেন এবং পোলিং এজেন্ট যারা থাকেন তাদের। এটি অহরহ হয় না, কোথাও কোথাও ঘটে। ব্যালট ইউনিটে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা এনআইডি দিয়ে ওপেন করার বিষয়টি যুক্ত করা যায় কিনা, সেটি ভাবা যেতে পারে।

নূরুল হুদা বলেন, বারবার আমাদের দেশে জেলা প্রশাসক ও পুলিশের কথাগুলো চলে আসে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে, বন্দুকের নল ও লাঠিচার্জ করে গণতন্ত্র কায়েম করা যায় না, উচিতও না। আমাদের দেশে যেটা হয়, এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। জনগণ ভোট দিতে যাবে স্বেচ্ছায়। সেখানে তাদের ভোটকেন্দ্রে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাওয়া, আবার ভোটকেন্দ্র থেকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার দায়-দায়িত্ব যদি প্রশাসনের থাকে, তাহলে সুষ্ঠুভাবে সেটা পরিচালনা করতে পারে না। তখন তাদের নিজস্ব ধ্যান-ধারণা বাস্তবায়নের সুযোগ থেকে যায়। এটা কোনোদিনও উচিত না। অন্য কোনো দেশে আমাদের দেশের মতো নির্বাচনের সময় যুদ্ধ করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় না। পিঠে বন্দুক, তারপর সাজসাজ রব, লাঠিপেটা করা, এ ধরনের পবিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলের এবং এ দেশের জনগণের। স্বাধীনভাবে ভোট দিতে যাবে সেখানে কেন পুলিশ থাকবে, আর্মি থাকবে, বিজিবি থাকবে, র‌্যাব থাকবে, ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে? ১১-১২টা সংস্থা নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালন করে। কেন? এখানে থাকবে শুধু নির্বাচন ব্যবস্থাপনার লোক ও ভোটার। এ অবস্থাটি তাৎক্ষণিকভাবে হবে না, সেটা আমি বিশ্বাস করি। এর জন্য সময় লাগবে, ধৈর্য লাগবে ও কালচার লাগবে।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন পরিচালনা করা ইসির জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জ। তবে সেটি কমিশন চাইলে অতিক্রম করা সম্ভব। পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনকালে কোনো চাপ সৃষ্টি হয়নি। তবে কোথাও কোথাও শতভাগ ভোট কাস্ট হওয়ায় অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল। তবে এ সমস্যার জন্য প্রার্থীদের আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ কিরণসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৭ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০২২
ইইউডি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।