ঢাকা: সামাজিক বন্ধন বিয়ে হচ্ছে একটি বৈধ চুক্তি যার মাধ্যমে দু’জন নারী-পুরুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিয়ের সংজ্ঞায় পার্থক্য থাকলেও তা নিজস্ব সংস্কৃতিভেদে নানা আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়।
বিপরীত লিঙ্গের দু’জন মানুষের মধ্যে বিয়ে সীমাবদ্ধ থাকলেও বিশ্বের কোথাও সমকামী বিয়েও প্রচলিত আছে।
এটি একটি ধর্মীয় রীতি হিসেবে স্বীকৃত হলেও আধুনিক সভ্যতায় তা আইনি প্রথার জায়গাও দখল করেছে। তবে হাল আমলে তরুণদের মধ্যে বিয়ের ক্ষেত্রে অনাগ্রহের মাত্রা বেড়ে চলছে।
সম্প্রতি ‘ন্যাশনাল ম্যারিজ প্রজেক্ট’ শীর্ষক গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণরা দেরিতে বিয়ে করছে। এ ক্ষেত্রে তারা জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছা এবং ক্যারিয়ার নিয়েই বেশি ভাবছে। তরুণরা একাও থাকছে না।
এক জরিপে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ বছর বা এরও বেশি বয়সী যুগলরা বিয়ে না করেই একত্রে থাকছেন। ২০০০ সালে এ সংখ্যা ১২ লাখে থাকলেও ২০১০ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ লাখে।

আপনি তরুণ কিংবা বৃদ্ধ হোন! কিছু ক্ষেত্রে বিয়ে না করার উপকারিতাও আছে। এরমধ্যে আর্থিক, মানসিক ও শারীরিকসহ ১০টি যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করা যায়।
অধিকাংশেরই মনে হয় বিয়ে ক’দিন পরে করলে ক্ষতি কী?
পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৮০’র দশকে বিয়ের মধ্যমা বয়স ছিল পুরুষের ক্ষেত্রে ২৫ বছর এবং নারীর ২২। কিন্তু ২০১১ সালে পুরুষ তার প্রথম বিয়ে করে সর্বোচ্চ ২৯ বছরে, আর মেয়েরা করে ২৭-এ।
প্রকৃতপক্ষে যুগলরা মনে করে, বাবা-মা হওয়ার জন্য কিংবা প্রতিযোগিতাপূর্ণ জীবনধারার জন্য বিয়ের দরকার নেই। তারা একা কিংবা প্রেয়সীর সঙ্গে একত্রে থাকছেন।
সুতরাং বিয়ে হচ্ছে না বলে এ নিয়ে চাপে থাকার কিছু নেই।
অনেকেই মনে করে বিয়ে করার সামর্থ্য নেই
২০১০ সালের এক জরিপ অনুসারে, বেশিরভাগ মানুষ মনে করে বিয়ে করার মত তাদের সামর্থ্য নেই। এরমধ্যে আর্থিকভাবে নিরাপত্তা না থাকা, সামাজিক অবস্থান এবং পরিপূরক যৌন ও সুখী জীবন।
এছাড়া, ২৪ শতাংশ মানুষ বিয়ে নিয়ে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করে। তারা কর্মজীবনে তাৎপর্যপূর্ণভাবে এগিয়ে যেতে চায়।

পুরুষদের মাত্রাতিরিক্ত ওজন ভীতি
নারীরা মনে করেন, বিয়ের পর তারা ‘নিজেদের ছেড়ে দিয়ে’ মুটিয়ে যান। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, বিয়ের পর পুরুষরাও মোটা হয়ে যাচ্ছেন।
মধ্য বয়সী দুই হাজার ৩০০ পুরুষের খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক কার্যক্রম এবং ওজন নিয়ে এ সমীক্ষা পরিচালিত হয়। এরমধ্যে ২৫ শতাংশই অবিবাহিত ও সম্পর্কবিচ্যুত পুরুষের চেয়ে বিবাহিত পুরুষরা মুটিয়ে গেছে।
বিয়ের পর মুটিয়ে যাওয়া প্রায় ৬০ শতাংশ পুরুষের সঙ্গে প্রায় ৪০ শতাংশ নারীর তুলনা করা হয় বলে সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে।
আর্থিক সমস্যা
অনেক বয়স্ক পুরুষই অর্থনৈতিক কারণে করে একত্রে থাকতে চাইলেও বিয়ে করতে রাজি হন না। কিছু অঞ্চলে বিয়ের প্রয়োজনীয় আইন-কানুন, স্ত্রীর দেনমোহর ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা ব্যয়ের কারণেও বিয়ের প্রতি অনীহা দেখা যায়।
বিয়েকে সেকেলে সংস্কৃতি ভাবা
বিয়ে নিয়ে গার্ডিয়ান এক সাক্ষাৎকার প্রতিবেদনে মিলেনিয়ালস গ্রুপের চিন্তা ভাবনা তুলে ধরেছে। সেখানে এই সম্পর্কে তাদের নীরস দৃষ্টিভঙ্গি ছিল।
প্রতিবেদনে নিউইর্য়ক সিটির ২৫ বছর বয়সী তরুণ পিটার বলেন, তিনি বিবাহিত নন।
তিনি বলেন, বিবাহ হচ্ছে ছেলে-মেয়েদের লালন-পালন এবং সম্পর্কের অঙ্গীকার নির্দেশ করার রক্ষণশীল প্রতিষ্ঠান।

বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে ঝুঁকি হতে পারে বিয়ে!
বেশিরভাগ লোকই মনে করেন বিয়ের পর তাদের বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে ফাটল তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে একক বন্ধু আছে যাদের।
নিউইয়র্কের একটি পত্রিকা অ্যামি সন (Amy Sohn) ফলাও করে প্রচার করেছে, বিয়ের পর কিছু দম্পতি তাদের সামাজিক জীবনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
এর মধ্যে ডিনার, মাঝরাতে ফোনকল, গরমে ছাদের পার্টিসহ কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগ্রহ কমে যায়।
আবেগপূর্ণ মুহূর্তগুলোতে বিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ
সামাজিক মনোবিজ্ঞানী ও ‘সিংগেল আউট: হাউ সিংগেলস আর স্টেরেওটাইপড, স্টিগমাটাইজড অ্যান্ড ইগেনোরড অ্যান্ড স্টিল লাইভ হ্যাপিলি এভার আফটার’ গ্রন্থের লেখক বেল্লা ডিপাউলো বলেন, বিয়ের পর অনেক দম্পতিই তার সঙ্গীকে নিয়ে যৌনজীবনসহ সব কিছুর কেন্দ্র মনে করে।
এমনকি তারা সাহচর্য্য, আন্তরিকতা, সঙ্গীর যত্ন নেওয়া, বন্ধুত্ব, আর্থিক ভাগাভাগি এবং গৃহস্থলির কাজকর্মসহ সব কিছুর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। যার পরিণাম হতাশা ও অসুখী। যা এক ধরনের ‘কালচারাল ফ্যান্টাসি’র জন্ম দেয়।
তিনি বলেন, এরমেধ্যে মজার বিষয় হলো এসব বিষয়কে একটি ভালো ও রোমান্টিক বিষয় হিসেবে দেখানো হয়। এক্ষেত্রে বেল্লা ইংরেজি গান ‘ইউ আর মাই এভরিথিং’র মতো চিন্তা করা হয়। যেখানে বোঝানো হয়েছে, সঙ্গী তৈরির ক্ষেত্রে কোনো স্বীকৃতি নেই।

বিয়ে টিকিয়ে রাখতে অঙ্গীকার ও সময়ের প্রয়োজন
দীর্ঘদিন সম্পর্ক নিয়ে কাজ করা মনোগবেষক এল জে ফিনকেল বলেন, যারা বিয়ের সম্পর্কের ইতি টেনেছেন, তারা ব্যক্তিগতভাবে বেশি শক্তি বিনিয়োগ ও সঙ্গীদের জন্য যথেষ্ট সময় দিতে পারছেন। কিন্তু বিবাহিতদের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়।
আমেরিকানদের উদহারণ টেনে সমাজ বিজ্ঞানী জেফ্রি শিশির এবং ডব্লিউ ব্র্যাডফোর্ড উইলকক্স বলেন, শিশু ছাড়া বিবাহিত দম্পতিদের মধ্যে একে অপরের সঙ্গে সপ্তাহে কমপক্ষে ২৬ থেকে ৩৫ ঘণ্টা ব্যয় করে। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই প্রত্যেকের ক্ষেত্রে কর্মস্থলে ব্যয় জরুরি।
তবে নিম্ন আয়ের দম্পতিদের মধ্যে বিচ্ছেদ বেশি হয় এবং তারা একে অপরকে সম্পদের অপ্রতুলতা, সময় এবং অন্যান্য বিষয়ের জন্য দোষারোপ করে থাকেন।
বিয়ের শেষ বিচ্ছেদে!
প্রত্যেক দম্পতিরই বিচ্ছেদের সম্ভাবনা রয়েছে এবং এ বিচ্ছেদ হতে পারে প্রতারণাপূর্ণ ও খুব ব্যয়বহুল।
কলম্বাস, ওহিও-তে সঙ্গীসহ বসবাসকারী ১২২ মধ্যবিত্ত দম্পতি ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা যায়, এরমধ্যে ৬৭ শতাংশ বিয়ে নিয়ে খুবই উতলা হওয়া সত্ত্বেও এ সম্পর্কে তারা উদ্বিগ্ন।
তারা বলেন, সামাজিক, অর্থনৈতিক, আইনি, মানসিক নানা জটিলতার কারণে উদ্বিগ্ন থাকতে হয়। যার পরিণাম হলো বিবাহবিচ্ছেদ।
একটি বিবাহবিচ্ছেদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিবাহ বিচ্ছেদ বেশ ভয়ানক রূপ নিয়েছে। এরমধ্যে প্রথম বিবাহের পর বিচ্ছেদ ঘটেছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশের এবং ৬০ শতাংশের বিচ্ছেদ ঘটেছে দ্বিতীয় বিয়ের পর।

এছাড়া, একটি বিবাহ বিচ্ছেদের গড় বয়স দাঁড়িয়েছে বর্তমানে ৩০ বছর।
বিয়ের বিকল্প সিভিল ইউনিয়ন বা অংশীদারিত্বে বসবাস
পশ্চিমা দেশগুলোর উদাহরণ দিয়ে গণমাধ্যমগুলো বলছে, অর্থবহ জীবন-যাপনের জন্য বিয়ে না করে সিভিল ইউনিয়ন কিংবা অংশীদারিত্বের (লিভ টুগেদার) মাধ্যমে বসবাসের পন্থা বেছে নিচ্ছে অনেকে। বিষয়টি সাধারণত পশ্চিমা দেশগুলোতে পুরুষ সমকামী (গে) দম্পতিরা এক্ষেত্রে এগিয়ে থাকলেও সাধারণ যুগলরাও প্রবেশ করছেন।
উদাহরণ হিসেবে ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনিয় রাজ্যে সিভিল ইউনিয়ন বিল পাসের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।
আমেরিকায় বসবাসের ক্ষেত্রে কিছু বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। এই মুহূর্তে কেবল কলোরাডো, হাওয়াই এবং ইলিনয় রাজ্যে সিভিল ইউনিয়নে বসবাসের সুযোগ রয়েছে। যা গে দম্পতিসহ সমকামীরা এ অধিকার প্রতিষ্ঠায় সাহায্য-সহযোগিতা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩৩ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৪