ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

নেপাল চিনেছে ‘বন্ধু বাংলাদেশ’

সাজেদা সুইটি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:২০, মে ৮, ২০১৫
নেপাল চিনেছে ‘বন্ধু বাংলাদেশ’ কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস / ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কাঠমান্ডু (নেপাল) থেকে: কথায় আছে, ‘বিপদে বন্ধুর পরিচয়’। ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত নেপালও যেন সে সত্য উপলব্ধি করছে বিপদসংকুল অবস্থায়।

পাশে দাঁড়ানো দেশগুলোর মধ্য থেকে সত্যিকারের বন্ধু চিনে নিচ্ছে তারা। সেদিক দিয়ে ‘বন্ধু বাংলাদেশ’কে নতুন করে চিনলো প্রতিবেশি দেশটি।
 
২৫ এপ্রিলের ভূমিকম্পের পরপরই যারা নেপালের প্রতি সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়েছে, বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম। নেপালের কখন কোন সহযোগিতা প্রয়োজন, সেটি বুঝে-শুনেই ত্রাণসহ অন্যান্য সহযোগিতা এসেছে।
 
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে এসব তথ্য জানালেন কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস।
 
মাশফি বলেন, নেপাল সরকার বাংলাদেশের প্রতি খুশি। তারা দেখেছেন, আমরা শুরু থেকে সেসব সহযোগিতাই দিয়েছি ও দিচ্ছি, যেগুলো সত্যিই তাদের প্রয়োজন।
 
তিনি বলেন, ললিতপুরে আমাদের ক্যাম্প হয়েছে, সেখানে প্রচুর নেপালি সহযোগিতা ও সেবা পেয়েছেন। ওষুধ, কম্বল, তাবু এসেছে দফায় দফায়। এখন ড্রাই ফুড আসছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রচুর চাল পাঠিয়েছেন।
 
নেপালের সংশ্লিষ্টরা নিজেরাই বলছেন, বাংলাদেশ থেকে আসা সামগ্রীই আমাদের সবচেয়ে কাজে লাগছে। তারা আমাদের প্রয়োজন বুঝতে পারছে।
 
মাশফি জানান, শুধু সরকারি পর্যায়ে নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন এনজিও, বিজিএমইএ, মেডিকেল কলেজ, ব্র্যাকসহ অনেকেই নেপালকে সহযোগিতা করেছেন।
 
খবরে প্রকাশ, নেপাল সরকার দুর্যোগের শুরুতে সেভাবে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারেনি। এছাড়া জরুরি মুহূর্তে সহযোগিতা চেয়ে, পরে আবার সবাইকে ফেরত যেতে বলে। এসব নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছিল বাংলাদেশের মিডিয়ায়। সেসব প্রসঙ্গেও কথা বললেন মাশফি।
 
তিনি বলেন, এতবড় দুর্যোগের জন্য কেউই আসলে প্রস্তুত থাকে না। আমাদের দেশে হলেও তেমনই হতো, যেমনটি নেপালে হয়েছে। আমরা যারা এখানে ছিলাম, প্রথম ৪৮ ঘণ্টা কেউ স্বাভাবিক ছিলাম না। বাইরে ছিলাম পুরোটা সময়। টানা ভূমিকম্প হচ্ছিল, আফটার শক হচ্ছিল।
 
সেসময় হাসপাতালগুলো চলছিল না। প্রাণের ভয়ে ডাক্তার ও রোগীরাও বাইরে ছিলেন। তখন নেপাল সরকার সবার কাছে জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় টিম চেয়েছিল। যাতে ভূমিকম্পে আহতদের তাৎক্ষণিক সেবা দেওয়া যায়। ধীরে ধীরে হাসপাতাল খুলেছে, সরকার মোটামুটি সব গুছিয়ে নিতে শুরু করে। তাই ইমার্জেন্সি টিমগুলোকে ফেরত যেতে বলে। তবে বাংলাদেশের কাজ তাদের অনেক বেশি ভালো লাগায় বরং অন্যদের চেয়ে বেশি সময় থাকতে বলেছে। এ দফার কাজ সেরে ফিরছে বাংলাদেশ টিম, যোগ করেন তিনি।
 
তিনি বলেন, নেপাল সরকারের প্রতি অভিযোগ করা ঠিক হবে না। এতবড় একটা দুর্যোগ! তারা তাৎক্ষণিক কেবিনেট মিটিং করেছে। সার্বিক তথ্যগুলো জেনে তৎপর হয়েছে। এতে কিছুটা সময়তো লেগেই যায়। এসব ইচ্ছাকৃত দীর্ঘসূত্রিতা নয়।
 
ত্রাণ পৌঁছাতে বেশ সময় লাগা প্রসঙ্গে মাশফি বলেন, এখানে মাত্র একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বিভিন্ন দেশ থেকে একযোগে ত্রাণ আসছিল, পাশাপাশি সাধারণ ফ্লাইটগুলোর ভিড় ছিল। তাই তখন একটু সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু এখন মালামাল আনলোডে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না, বেশি সময়ও লাগছে না।
 
বাংলাদেশের সহযোগিতা প্রসঙ্গে ফেরেন মাশফি, নেপাল আমাদের প্রতি বেশ সন্তুষ্ট। আমাদের দেশের মানুষের নেপালের প্রতি যে আন্তরিকতা, সেটি আবার প্রমাণ পেয়েছে নেপাল। এজন্য তারা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে যেসব সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে, তা আমাদের এখন খুব বেশি প্রয়োজন।
 
মাশফি বলেন, অনেকেই সহযোগিতা নিয়ে এসেছেন। তবে বেশিরভাগই ছিল শহরকেন্দ্রিক। কিন্তু আমরা গ্রামে, পাহাড়ে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছি। সিন্ধুপাল চক সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ওই জায়গাটি সবচে দুর্গমও। সেখানেও আমরা সবার আগে গিয়েছি ত্রাণ নিয়ে।
 
বাংলাদেশ দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব মোহাম্মদ বারিকুল ইসলাম গত ০৪ মে বাংলানিউজকে জানান, সেদিন পর্যন্ত ৭শ’ ৬১টি তাবু, ৭শ’ টন বিস্কুট, চার হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানি, ৯০ কেজি তুলা, ৪৫ কেজি গজকাপড়, ২২ কার্টন তৈরি পোশাক, ১৩শ’ কম্বল এসেছে বাংলাদেশ থেকে।
 
বাংলাদেশ এয়ারফোর্সের ৫টি ফ্লাইটে এগুলো আনা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ আর্মির ৩০ সদস্যের মেডিকেল টিম ললিতপুরে কাজ করছে ২৬ এপ্রিল থেকে।
 
ললিতপুর, ধুলিখাল, সিন্ধুপাল চক, নোয়াকোট, গোর্খাসহ বেশ কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা পৌঁছে দিয়েছি আমরা, বলেন তিনি।
 
শুক্রবার (০৮ মে) তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে আসা চাল ও পানির বোতল বোঝাই ৩৮টি ট্রাক নেপালের মেছি ও কাকরভিটা সীমান্তে পৌঁছেছে। এ নিয়ে মোট এক হাজার ৮শ’ ২৫ মেট্রিক টন চাল পাঠালো বাংলাদেশ।
 
শুধু সেনা সদস্য ও ত্রাণ নয়, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস থেকে পাঁচ জনের একটি টিমও নেপাল আসে সহযোগিতার উদ্দেশ্যে।
 
এছাড়া নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশিরাও নিবেদিত রয়েছেন সেবায়। সাধ্যাতীত চেষ্টা করছেন প্রতিবেশী এ দেশটিকে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি যোগাতে।
 
এমন ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতেও অনেকে চলে আসছেন এদেশে ত্রাণ দিতে। বাংলাদেশে আয়োজিত হচ্ছে কনসার্ট, যার অর্জিত অর্থ পাবে নেপাল।
 
শুধু তাই নয়, নেপালের সংবাদ প্রচারেও শ্রদ্ধা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলানিউজসহ যে কয়েকটি বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যম এখানে এসেছে, সবাই সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য তুলে ধরে বিশ্ব দরবারে নেপালের প্রতি সহমর্মিতা তৈরি করার চেষ্টা করছে।
 
বেশ কয়েকজন নেপালির সঙ্গে আলাপে জানা যায়, ভারত-পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশ নেপালের এ দুঃসময়ে কষ্ট আরও বাড়িয়েছে। ত্রাণ দিয়েছে প্রচারের জন্য, কিন্তু ত্রাণগুলো কাজে আসেনি সেভাবে।
 
তারা বলছেন, ভারতের যে কয়েকজন সেনা সদস্য নেপালে এসেছেন, তাদের কাজের চেয়ে প্রচারণা বেশি দিয়েছে ভারতের মিডিয়াগুলো। এখানে যেহেতু হিন্দি চ্যানেলগুলো বেশ চলে ও ভাষাও অধিকাংশ মানুষ বোঝেন, তাই তারা ভারতে প্রচারিত খবরগুলো দেখে বেশ কষ্ট পেয়েছেন।
 
সব মিলিয়ে তাই বাংলাদেশকে নেপাল আরও বেশি আপন ভাবছে। নেপালের প্রতি বাংলাদেশ সবদিক থেকে ইতিবাচক রয়েছে বলে বলছেন সংশ্লিষ্ট সবাই।
 
মাশফি ও বাংলাদেশ থেকে আসা সংবাদকর্মীরা নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকেও বললেন, ‘বাংলাদেশি’ পরিচয় শুনলে নেপালিরা আশ্বস্ত হন। পরম বন্ধু মনে করে তারা মনের কথা খুলে বলেন বাংলাদেশিদের।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৫
এসকেএস/এসএস

** আলো বাড়ছে থামেলে
** নেপাল-চিত্রে ঢাকার অশনিসংকেত
** নিরলস চেষ্টা হাসপাতালে
** ঘর বানাই দৌ, গোরি খানে দৌ
** জীবন এখানে এমন!
** বিধ্বস্ত নেপালে বাংলাদেশি সংবাদকর্মীরা
** শোকের ১৩ দিন, তবু জীবনের জয়গান
** নিস্তব্ধ পশুপতি, ভিড় কেবল চিতাঘাটে
** আড়ালেই ঝুরঝুরে নিম্বু-ভূতুড়ে ধর্মস্থালী
** দরবার স্কয়ার এখন তাবুর স্কয়ার
** বিমানবন্দর থেকে বেরুতেই নাকে লাশের গন্ধ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ