ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২, ০১ জুলাই ২০২৫, ০৫ মহররম ১৪৪৭

ইসলাম

শ্বশুরালয়ে মৌসুমি যৌতুককে না বলুন

ইসলাম ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৪৩, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৪
শ্বশুরালয়ে মৌসুমি যৌতুককে না বলুন

যৌতুক একটি নীরব ঘাতক। সমাজের ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সব মহলেই এটির চর্চা দেখা যায়।

বিভিন্ন মৌসুমি খোলসে যৌতুকের দানবীয় উপস্থিতি অনেককে পিষ্ট করে চলেছে। বিয়ের দিন যে যৌতুক বরপক্ষ উশুল করে তাকে আমাদের সমাজ খাটো চোখে দেখলেও এরপর থেকে বিরামহীন যৌতুকের ধারাবাহিকতা শুরু হয়, তাকে কিন্তু সমাজ বিশাল সম্মানের বিষয়ই মনে করে থাকে।

অথচ বিয়ের দিনের যৌতুক তো শুধু ভূমিকামাত্র। এরপর শুরু হয় বিভিন্ন মৌসুমি ছদ্মনামে যৌতুক আদায়ের মহোৎসব। যেমন, রমজানে ইফতারি পাঠানো, ঈদুল ফিতরে সেমাই-চিনি, ঈদুল আজহায় কোরবানির পশু, ফলের মৌসুমে মৌসুমি ফল ইত্যাদি। এর ধারাবাহিকতা যেন মৌসুমের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন নামে সারা বছরই লেগে থাকে, যা আদায় করতে গিয়ে কনেপক্ষ হয়ে পড়ে দিশাহারা।

কারো কারো ক্ষেত্রে শরণাপন্ন হতে হয় সুদি মহাজনের কাছে কিংবা কখনো হারিয়ে ফেলতে হয় নিজেদের শেষ সম্বলটুকু। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও টানাপোড়েনের এই কঠিন সময়েও সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও আত্মীয়দের চাপে পড়ে দিতে হয় ইফতারি, ঈদ উপহার, মৌসুমি ফলসহ নানা রঙের যৌতুক, যা অনেকটা অন্যায়ভাবে উপহার আদায়ের নামান্তর। অথচ অর্থনৈতিক লেনদেনের মৌলিক বিধান সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পরস্পর একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না এবং এই উদ্দেশ্যে বিচারকের কাছে সে সম্পর্কে মামলা করো না যে মানুষের সম্পদ থেকে কোনো অংশ জেনেশুনে গ্রাস করার গুনাহে লিপ্ত হবে। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৮) 

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো মুসলমানের সম্পদ তার আন্তরিক সম্মতি ছাড়া হস্তগত করলে তা হালাল হবে না। ’ (বায়হাকি, হাদিস : ১৬৭৫৬)
যৌতুকের প্রচলনে আমরা নিজেরাই দায়ী। কার শ্বশুরবাড়ি থেকে কী পরিমাণ যৌতুক এলো এ নিয়ে আমাদের সমাজে খুব বেশি অহংকার করা হয়। ফলে শ্বশুরালয়ের লোকদের মধ্যে এমন চিন্তা কাজ করে যে সবার বাড়িতে উপহার এলো, আমার বাড়িতে এলো না, আমি গরিবের সঙ্গে আত্মীয়তা করলাম? এমন হীন মানসিকতাই আমাদের সবাইকে এই নোংরা ‘ভিক্ষা’ নিতে বাধ্য করে। অথচ হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘ওপরের (দাতার) হাত নিচের (গ্রহীতার) হাত থেকে শ্রেষ্ঠ। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৪১)

আবার অনেক বাবাও মেয়ের বাড়িতে ঢাকঢোল পিটিয়ে জিনিসপত্র দিয়ে সমাজের অন্যদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। মেয়েকে সন্তুষ্টচিত্তে কিছু দিতে চাইলে এমনভাবে দেওয়া উচিত, যাতে অন্যরা এই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হয়। কারণ বেশির ভাগ মানুষই লোকলজ্জার ভয়ে পড়ে নিজের সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও এই নোংরা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়, এর পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। মহান আল্লাহ সবাইকে সুবুদ্ধি দান করুন। আমিন

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৪
এএটি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।