ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ ভাদ্র ১৪৩২, ২৬ আগস্ট ২০২৫, ০২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

অফবিট

প্রকৃতি-আধুনিকতার মিশেল ভয়ঙ্কর সুন্দর পর্বতমালা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩:৪৪, নভেম্বর ২১, ২০১৭
প্রকৃতি-আধুনিকতার মিশেল ভয়ঙ্কর সুন্দর পর্বতমালা! দূর থেকে সুউচ্চ পর্বতগুলোকে নীল দেখা যায় বলেই এর নাম ব্লু রিজ-ছবি-সংগৃহীত

প্রায় ৪০ কোটি (৪০০ মিলিয়ন) বছর আগে সিলুরিয়ার সময়কালে উত্তর আমেরিকার মেরিল্যান্ড প্রান্তে তৈরি শুরু হয়েছিল ব্লু রিজ পর্বতমালার। আর ৩২ কোটি বছর আগে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের ভূ-প্রাকৃতিক সংঘর্ষে উত্তর-পশ্চিম থেকে সম্প্রসারিত হতে হতে এটি পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত স্থিত হয়। 

আজ সেই পর্বতমালা পূর্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বতন্ত্র একটি প্রদেশ, যা দু’টি প্রধান জাতীয় উদ্যান শেনদোভা ও গ্রেট স্মোকি এবং সেগুলোকে সংযুক্তকারী ৭৫৫ কিলোমিটারের সুন্দর মহাসড়ক ব্লু রিজ পার্কওয়ে বেষ্টিত। পুকুর, হ্রদ, নদী, খাঁড়ি ও জলপ্রপাতের, বনের প্রশান্ত পরিবেশ, অনেক গাছপালা ও প্রাণীদের প্রাকৃতিক বাসস্থান ব্লু রিজ এমনিতেই এক ভয়ঙ্কর সুন্দর পর্বতমালা।

 

প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যের সমৃদ্ধ সেই সম্ভার আর সৌন্দর্যমণ্ডিত সুবিখ্যাত অ্যাপালাচিয়ান ট্রেইলের সঙ্গে মানুষের তৈরি নানা স্থাপনা, শিল্পিত ইকোগ্রাম আর প্রযুক্তির উৎকর্ষের সমন্বয়ে ব্লু রিজ পর্বতমালা আজ বিশ্বের অন্যতম সেরা সম্পদ।

দু’টি প্রধান জাতীয় উদ্যানকে সংযুক্তকারী ৭৫৫ কিলোমিটারের সুন্দর মহাসড়ক ব্লু রিজ পার্কওয়ে।                                          ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত  
কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০ মিটার (৫ হাজার ফুট) উচ্চতার ৫২৫টি পর্বত নিয়ে গঠিত গ্রেট অ্যাপালিচিয়ান উপত্যকার ব্লু রিজ পর্বতমালা দক্ষিণে জর্জিয়া থেকে উত্তরে পেনসিলভানিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। ৬ হাজার ৬৮৪ ফুটের (২ হাজার ৩৭ মিটার) উত্তর ক্যারোলিনাস্থিত মিচেল শুধু ব্লু রিচেরই নয়, সমগ্র অ্যাপালিচিয়ান শৃঙ্খলেরই সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। শত শত কোটি বছর ধরে আবহাওয়া ও ক্ষয়-ক্ষতির কারণে ওই সর্বোচ্চ চূড়া পর্যন্তই ঊর্ধ্বমুখী ব্লু রিজ পর্বতমালা।  

দূর থেকে পর্বতমালাটির সুউচ্চ পর্বতগুলোকে নীল দেখা যায় বলেই নামকরণ করা হয়েছে ব্লু রিজ। তবে দু’টি জাতীয় উদ্যান বহু স্বতন্ত্র রঙে সমন্বিত। নীল‍াভ কেন্দ্রীয় শৃ্ঙ্গটি নিউ জার্সি ও হুদসন নদী উচ্চভূমির মধ্য দিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চল হয়ে ম্যাসাচুসেটসের বার্কশিয়ার ও ভেরমন্টের গ্রিন পর্বতমালায় পৌঁছেছে।

সবচেয়ে দর্শনীয় পর্বতমালা বলে বিবেচিত ব্লু রিজের ভৌগোলিক এলাকা চার ঋতু ও শীতল-আর্দ্র জলবায়ু সমৃদ্ধ অনন্য আবহাওয়ার অঞ্চল। পায়ের নিচে মেঘের সমুদ্র থাকার অনুভূতি সঞ্চার করে সেখানে গেলে।  

সূর্যোদয়ের সময় সামুদ্রিক বায়ুর ঠাণ্ডা বাতাস আর্দ্রতার সঙ্গে মিলিত হয়ে মেঘ বা কুয়াশা তৈরির মাধ্যমে অসাধারণ দৃশ্য উপস্থাপন করে। দিনের বেলায় পাহাড়গুলোতে শীতল হাওয়ার পরশ থাকলেও সূর্য ডুবে গেলে ঘন শীতল বাতাসে ডুবে যায় পুরো গ্রেট অ্যাপালিচিয়ান উপত্যকা।
ব্লু রিজ পর্বতমালার একটি সঙ্গীত ও শিল্পভিত্তিক ইকোগ্রাম।  ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
এখানকার প্রাকৃতিক ওক, মিশ্র ওক-হিকোরি ও ওক-পাইন এবং ঘাস, ঝোপ ও হেমলক বনও সৌন্দর্য বাড়িয়েছে পর্বতমালার, যার বেশিরভাগ অ্যাপালাইচিয়ান ঢাল বনভূমির অন্তর্গত। সরীসৃপসহ অনেক প্রজাতির মাছের বৃহৎ বৈচিত্র্য রয়েছে ব্লু রিজে। স্থানীয় আমেরিকান কালো ভাল্লুক, সজীব ও অন্যান্য পাখি প্রজাতি, নেকড়ে, সাদা লেজ বিশিষ্ট হরিণ, বন্য শুকরসহ সুবিশাল প্রাণিসম্পদও সমৃদ্ধ করেছে এর ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যকে।  

জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও ভূ-তত্ত্ববিদ রিচার্ড টোলোর সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে, ব্লু রিজের ভূ-গর্ভস্থ সৌন্দর্যও এর পেট্রোলোজিক ও জেরোফ্রোনলজিকাল ইতিহাসকে আরও বেশি গভীরতা দেয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।