ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ জুলাই ২০২৫, ১৯ মহররম ১৪৪৭

রাজনীতি

ঢাকা-১৮: ভোটের মাঠে বিএনপির ৪ মনোনয়ন প্রত্যাশী

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:৫৯, আগস্ট ২০, ২০২০
ঢাকা-১৮: ভোটের মাঠে বিএনপির ৪ মনোনয়ন প্রত্যাশী বাঁ থেকে সাদি, কফিল উদ্দিন, সেগুন ও জাহাঙ্গীর

ঢাকা: ঢাকার দু’টি আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি বিএনপি। করোনা ভাইরাসের এ মহামারির মধ্যে নির্বাচন নিয়ে দলটির হাইকমান্ড নীরবতা পালন করছে।

 

তবে দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে নির্বাচন করার। এরই মধ্যে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের অনুসারীরা। প্রায় প্রতিদিনই উঠান বৈঠক থেকে শুরু করে মতবিনিময় সভা করছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। অন্যদিকে তাদের অনুসারীরা প্রচারণায় সরব হয়ে উঠেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে কাদা ছোড়াছুড়ি।

শূন্য ঘোষিত দু’টি আসনের মধ্যে ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে তৎপরতা শুরু করেছেন দলের চারজন নেতা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে দলের চিঠি পেয়েছিলেন ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা মো. বাহাউদ্দিন সাদী এবং ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন। কিন্তু পরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জেএসডির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনকে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া হয়। ফলে বিএনপি প্রার্থীরা জোটের প্রার্থীর পক্ষে তেমন সক্রিয় ছিলেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এবারের উপ-নির্বাচনে শহীদ উদ্দিন স্বপনের অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা নেই। গত নির্বাচনে যেসব বিএনপি নেতারা তার পক্ষে কাজ করেনননি, এবার তাদের বিরোধিতা করবেন জেএসডি নেতাকর্মীরা- এমনটিই জানা গেছে।

বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, দলের চার নেতা এ আসনে ধানের শীষের টিকেট পেতে নিজেদের মতো করে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। গত নির্বাচনে দলের চিঠি পাওয়া দুই নেতার বাইরে আলোচনায় থাকা অন্য দু’জন হচ্ছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম কফিল উদ্দিন আহম্মেদ।

তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে আস্থার জায়গায় থাকা বাহাউদ্দিন সাদী এবারও আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন।  

এলাকার নেতাকর্মীরা জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন, স্থানীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা এবং প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য হওয়ায় সাদী ধানের শীষের টিকেট পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবেন।

বাহাউদ্দিন সাদী বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান করোনা সংকটকালীন মুহূর্তে নির্বাচনে যাওয়ার থেকেও জনগণের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টিকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। আমরা তার সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখিয়ে একই সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে আপাতত প্রচার বন্ধ রেখেছি।

তিনি বলেন, বিগত ৪০ বছর উত্তরা এলাকার বিএনপি কিছু লোকের হাতে জিম্মি ছিল। আমরা সেখান থেকে বিএনপিকে বের করে, তৃণমূলের হাতে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি, এটাই আমার বড় সফলতা। এছাড়া গত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জোট থেকে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ায় দলের অনেকে নিষ্ক্রিয় হলে গেলেও আমিসহ অনেকেই মাঠে ছিলাম। আশা করি, মনোনয়ন দেওয়ার সময় বিষয়টি দলের হাইকমান্ড বিবেচনায় নেবে। দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচনী মাঠে লড়াইয়ের পুরো প্রস্তুতি রয়েছে।  

একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় চিঠি পাওয়া ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকার কারণে এ আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন এমন আলোচনা ছিল সর্বত্র। তবে তার বিরুদ্ধে গত সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে মনোনয়ন দৌড়ে অনেকটা ছিটকে পড়তে পারেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। তাছাড়া একাদশ নির্বাচনে জোট প্রার্থীর পক্ষে মাঠে না থাকারও অভিযোগ রয়েছে।

সিটি নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসনের সাতজন বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির কাছে এস এম জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে বিএনপি প্রার্থীদের হয়রানি করা এমনকি বিএনপি কাউন্সিলর প্রার্থীদের ওপর আওয়ামী লীগ কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থিত বাহিনীর হামলা-মামলাতে সরাসরি ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ লিখিত আকারে জমা দিয়েছেন বলে সূত্র জানায়।

এসব বিষয় জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ৩৪ বছরে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কখনও কিছু করিনি। ভবিষ্যতেও করব না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাঠে ছিলাম কি না- এলাকার মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীরা জানেন। আর সিটি নির্বাচনে সার্বক্ষণিক দলীয় মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছি। কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিপক্ষে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমার জানা মতে কেউ লিখিত দূরের কথা, মৌখিকভাবেও আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেননি।
 
সাবেক ছাত্রনেতা মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন বৃহত্তর উত্তরা থানা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সহ-সভাপতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও এফ রহমান হলের ভিপি ছিলেন। দুইবার উত্তরের এক নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিএনপির সমর্থন নিয়ে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেছেন।  

সেগুন বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে নির্বাচন করা বৃথা। এটি এরই মধ্যে বারবার প্রমাণ হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচন করার ইচ্ছা না থাকলেও নেতাকর্মীদের চাপে মাঠে আছি।

আরেক প্রার্থী এম কফিল উদ্দিন আহম্মেদ বাংলানিউজকে বলেন, উত্তরায় আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা। ৩২ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছি। শতাধিক মামলার আসামি হয়েছি। দলের জন্য আগামীদিনেও সমানভাবে কাজ করে যেতে চাই। ঢাকা-১৮ আসনে দল আমাকে মনোনয়ন দিলে এবং নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিজয় উপহার দিতে আমি সক্ষম হব।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে আমি নির্বাচনের মাঠে আছি। ওয়ার্ড পর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে জনগণের কাছে যাচ্ছি। করোনার মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রায় প্রতিদিন জনসংযোগ চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৭ ঘণ্টা আগস্ট ২০, ২০২০
এমএইচ/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।