ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিক্ষা

শিক্ষা নগরীর শিক্ষা ব্যবসা-৩

এক পরিবারে কাছে জিম্মি শম্ভুগঞ্জ জিকেপি কলেজ!

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:১০, জুলাই ১৪, ২০১৪
এক পরিবারে কাছে জিম্মি শম্ভুগঞ্জ জিকেপি কলেজ! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ: সিরাজুল ইসলাম কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি। স্ত্রী সুলতানা পারভীন কলেজ প্রিন্সিপাল।

স্ত্রীর বড় ভাই নাজমুল হুদা শিক্ষক প্রতিনিধি আর ভাগ্নে মুরাদ আহাম্মদ কলেজটির স্বাচিবিক বিদ্যা বিভাগের প্রভাষক। এভাবেই এক পরিবারের বৃত্তে বন্দি হয়ে চলছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জনকল্যাণ পরিষদ (জিকেপি) কলেজ।

শহরতলীর শম্ভুগুঞ্জ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত এ কলেজে অনিয়মই নিয়ম। স্বেচ্ছাচারিতা, লুটপাট ও শিক্ষা বাণিজ্যের এক মডেল। প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যদের অনিয়মের বিপক্ষে মুখ খোলার সাহস নেই কারো। কিন্তু তাদের জিম্মি দশা থেকে বাঁচার আকুতি আর নীরব দীর্ঘশ্বাস রয়েছে কলেজটির শিক্ষকদের।

জানা যায়, ময়মনসিংহ শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে শম্ভুগঞ্জ জিকেপি কলেজে রয়েছে প্রায় ৭শ’ শিক্ষার্থী। এর বিপরীতে সরকারি অনুদানভুক্ত (এমপিও) শিক্ষক ১৫ জন ও কর্মচারী দু’জন। এর বাইরে রয়েছেন আরো জনা চল্লিশেক শিক্ষক।

কলেজ  সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ গর্ভনিং বডির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী প্রিন্সিপাল সুলতানা পারভীনের লাগামহীন অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতায় এখানে শিক্ষক কর্মচারীদের জিম্মিদশা। ভেঙে পড়েছে কলেজটির শিক্ষাব্যবস্থাও।

তারা আরো অভিযোগ করেন, গত ১৩ মাস ধরে এমপিওভুক্ত ১৭ শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন আটকে রেখেছেন এ দম্পত্তি। একইসঙ্গে গত বছরের কলেজ কোচিংয়ের প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকারও কোনো হদিস নেই। শিক্ষকদের এ টাকা নিজেদের পকেটে ভরেছেন তারা।

শুধু ২০১৩-১৪ অর্থবছরে কলেজ তহবিলের প্রায় ৩০ লাখ টাকা এ দম্পত্তি আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এসব বিষয়ে সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। আর গত বছরের কোচিংয়ের টাকা শিক্ষকদের দিয়ে দেয়া হয়েছে।

কলেজ তহবিলের টাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কলেজ তহবিলে কোনো টাকা নেই। উল্টো কলেজের ফান্ডে ঋণ রয়েছে।

সূত্র জানায়, চলতি বছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ পরিদর্শক আবুল কালাম পরিদর্শনে এলে অনিয়ম ও দুর্নীতির এ ভয়াবহ চিত্র ধরা পড়ে। এমনকি কলেজের আয়-ব্যয় হিসাব বই ও ডেইলি কালেকশন রশিদ বই পান নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই টিম, এমন দাবি নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের ম্যানেজিং কমিটির একাধিক সদস্যের।        

প্রায় ১৩ মাস যাবত কলেজের ১৭ শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা আটকে রাখার বিষয়ে কলেজ পরিচালনা কমিটির নির্বাচিত সদস্য রইছ উদ্দিন মাস্টার বলেন, ওই শিক্ষকদের কয়েক মাসের বেতন বকেয়া আছে। এরপরেও তো কলেজ ভালোই চলছে।

সূত্র জানায়, কলেজ পরিচালনা কমিটির আয়-ব্যয় সংক্রান্ত কোনো সভা না হওয়ায় কলেজ তহবিলের ৩০ লাখ টাকা আত্মœসাতের বিষয়টিও ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ প্রসঙ্গে রইছ উদ্দিন মাস্টার বলেন, আমার জানামতে কলেজ তহবিলের আয়-ব্যয় নিয়ে কোনো সভা হয় না।

তবে অন্যান্য বিষয়ে কলেজের পরিচালনা কমিটির সভায় আলোচনা হয় বলে জানান পরিচালনা কমিটির আরেক সদস্য মোসলেম উদ্দিন। তিনি বলেন, কমিটি গঠনের পর দুই থেকে তিনটি সভা হয়েছে। কিন্তু কলেজের আয়-ব্যয় নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সভা হয়নি।


কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম কোটি টাকা মূল্যের জমি কেনা প্রসঙ্গে বলেন, বছর খানেক আগে আমার স্ত্রী কলেজ প্রিন্সিপাল নিজের নামে ৩১ শতাংশ জমি কিনেছেন। তবে কলেজের টাকায় এ জমি কেনার প্রশ্নই আসেনি।

জানা যায়, প্রিন্সিপাল হওয়ার জন্য অভিজ্ঞতার সনদ হিসেবে সুলতানা পারভীন সদর উপজেলার রাঘবপুর রহমানিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রসায় চাকরির নিয়োগপত্র জমা দিয়েছিলেন।

কিন্তু রাঘবপুর মাদ্রসা পরিচালনা কমিটির তৎকালীন সদস্য ও বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি আ: হক চেয়ারম্যান বলেন, মাদ্রাসার তরফ থেকে ৩ বছরের অভিজ্ঞতায় সুলতানা পারভীনকে একটি নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল বলে শুনেছি। কিন্তু আমার জানামতে তিনি এ মাদ্রাসায় কখনো শিক্ষকতা করেন নি।

ওই মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল নেছার উদ্দিন বলেন, তারা এ মাদ্রাসার জমিদাতা। এ সুবাদে তাকে ওই সময় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন প্রিন্সিপাল সুলতানা পারভীন। তিনি বলেন, নীতিমালা অনুযায়ীই কলেজটির প্রিন্সিপাল হয়েছি। যাবতীয় সুবিধাদিও ভোগ করছি।

সূত্র আরও জানায়, সদর উপজেলার শম্ভুগঞ্জ জিকেপি কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন অনুমতি ছাড়াই ডিগ্রি খোলা হয়েছে। একইসঙ্গে এ শাখায় শিক্ষকও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ২০ থেকে ২২ জন। কোনো নিয়োগ কমিটি ছাড়াই কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম এজন্য প্রতি শিক্ষকের কাছ থেকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন।

এসব বিষয়ে কলেজ গর্ভনিং বডির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, অনেকে অনেক কথা বলতে পারে। কিন্তু এগুলো ঠিক না। আপনারা (সাংবাদিকরা) বিষয়টিকে পজেটিভভাবে দেখেন।

এ কলেজের অনিয়ম ও লুটপাট প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরির্দশক আবুল কালামের সঙ্গে প্রথমে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফাইলপত্র দেখে এ সম্পর্কে কথা বলবেন বলে আশ্বস্ত করেন। এরপর থেকে রহস্যজনক কারণে তিনি আর ফোন ধরেন নি।

এ সম্পর্কে একটি সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের টিমের ওই পরিদর্শককে পরিদর্শনের সময়কালেই ‘ম্যানেজ’ করায় তিনি মুখে কুলুপ এঁটেছেন।

** ভাড়াটে বাড়ির জটাজালে বন্দি কলেজ!
** ময়মনসিংহে কলেজে ভর্তি ফি নিয়ে নৈরাজ্য

 

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

শিক্ষা এর সর্বশেষ