ঢাকা, বুধবার, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিক্ষা

ফালগুনীদের স্বপ্ন পূরণের ভীত তৈরি করে ট্রাস্ট কলেজ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭:৪৫, মে ১৭, ২০১৭
ফালগুনীদের স্বপ্ন পূরণের ভীত তৈরি করে ট্রাস্ট কলেজ ট্রাস্ট কলেজের অদম্য মেধাবী ফালগুনী সাহা

ঢাকা: ফালগুনী সাহা এক অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থীর নাম।শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, আর্থিক অস্বচ্ছলতা কোনো কিছুর কাছেই হার মানতে রাজী নন ফালগুনী। অদম্য ইচ্ছাশক্তি, কঠোর মনোবল, নিরন্তর পরিশ্রম আর হৃদয়বান মানুষের সামান্য সহযোগিতা, সব মিলে আলোকিত মানুষ হওয়ার প্রত্যয়ে সাফল্যের শিখরে পৌঁছানোর জন্য ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

কে এই ফালগুনী? ফালগুনী হলেন সেই মেয়ে যাকে নিয়ে ২০১১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ফলাফল প্রকাশের পর দেশের নামীদামী প্রতিটি দৈনিক পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়েছিল। অদম্য মেধাবী ফালগুনী শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পরাজিত করে ২০১১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হন।

এসএসসি পাশের পরেও ফালগুনী ও তার পরিবার আবার চিন্তিত হয়ে পড়েন উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির ব্যাপারে। তিনি কোন কলেজে ভর্তি হবেন? কে আসবে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে? ঠিক সে সময়ে ফালগুনীর পাশে দাঁড়ায় ট্রাস্ট কলেজ।

২০১১ সালের ১৭ মে মঙ্গলবার ট্রাস্ট কলেজের অধ্যক্ষ বশির আহাম্মেদ ভূঁইয়ার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বাবা জগদীশ চন্দ্র সাহা, খালা সবিতা রায় এবং চাচাতো ভাই গোপাল সাহাসহ ট্রাস্ট কলেজে হাজির হয়েছিলেন ফালগুনী সাহা। ট্রাস্ট কলেজে পড়াশুনাসহ শিক্ষা লাভের মনোরম পরিবেশ দেখে ওই সময়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন ফালগুনী সাহা ও তার পরিবার। ওই দিন ফালগুনী সাহা ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ট্রাস্ট কলেজে অধ্যয়নের ইচ্ছা প্রকাশ করলে অধ্যক্ষ তাকে স্বাগত জানান এবং সেই সাথে দুই বছর বিনাবেতনে পড়ালেখা ও হোস্টেলে থাকা খাওয়াসহ সমুদয় খরচ বহন করার আশ্বাস দেন। ট্রাস্ট কলেজের অদম্য মেধাবী ফালগুনী সাহা

১ জুলাই ২০১১। শুরু হয় ফালগুনীর একাদশ শ্রেণির কলেজ জীবন। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা ২০১৩ পর্যন্ত একাডেমিক, সকল শিক্ষা-উপকরণ এবং হোস্টেলে থাকা খাওয়াসহ সমুদয় খরচ বহন করে ট্রাস্ট কলেজ। যেহেতু তার দুটো হাতই নেই সেহেতু তার প্রাত্যহিক কাজে সহযোগিতার জন্য ট্রাস্ট কলেজের পক্ষ থেকে একজন আয়াও নিয়োগ দেওয়া হয়।

এসএসসিতে জিপিএ-৫ এর পর ২০১৩ সালে আবারও এইচএসসি পরীক্ষায় ট্রাস্ট কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ হতে জিপিএ-৫ পেয়ে বর্তমানে ফালগুনী পড়াশুনা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে। চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী ফালগুনী পড়াশুনা শেষ করে ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে দেশের সেবা করতে চান। ফালগুনী ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার যে স্বপ্ন দেখছেন তার ভীত তৈরি করে দিয়েছিল ট্রাস্ট কলেজ।

ট্রাস্ট কলেজ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ফালগুনীর মতো অদম্য মেধাবীদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং এ উদ্যোগ প্রসারিত থাকবে ভবিষ্যতেও।

কি হয়েছিল ফালগুনীর শৈশবে তা একটু না বললেই নয়। ২০০২ সাল। তখন তার বয়স সাত বছর। দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ফালগুনী পাশের বাড়ির একটি ভবনের ছাদে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করছিলেন। হঠাৎ বিদ্যুতের তারের সঙ্গে শক লেগে তার দুই হাতের কনুই পর্যন্ত পুড়ে যায়। প্রথমে এলাকায় চিকিৎসা নিলেও কয়েক দিন পরে দেখা যায়, তার বাম হাতের দুটি আঙ্গুল পঁচে গেছে। মুদি দোকানি বাবা জগদীশ চন্দ্র সাহা পড়ে যান বিষম চিন্তায়। উন্নত চিকিৎসা করানোর মতো পর্যাপ্ত টাকা তার বাবার ছিল না। পরে এলাকার লোকজনের আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে মেয়েকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে চলে যান কলকাতায় বাবা। সেখানকার চিকিৎসকরা ক্যানসারের আশঙ্কায় তার দুই হাতের কনুই পর্যন্ত কেটে ফেলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

শিক্ষা এর সর্বশেষ